জন্ডিস কি? জন্ডিস এর কারণ, লক্ষণ, পরামর্শ ও চিকিৎসা।

জন্ডিসঃ

জন্ডিস (Jaundice) যা ইক্টেরাস (ictetus) নামেও পরিচিত। জন্ডিস (Jaundice) কোন রোগ নয় বরং এটি রোগের উপসর্গ মাত্র, যাতে শরীরের চামড়া ও চোখ হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় ফলে ত্বক, স্ক্লের বা চোখের সাদা অংশ ও অন্যন্য মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্ব ১.২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর নিচে থাকে। ৩ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর বেশি হলে জন্ডিস হয়। পিত্তথলি হতে পিত্তনালী দিয়ে পিত্তরস ডিওডেনামে অবস্থিত খাদ্যবস্তুর সাথে মিশ্রিত হয়। যদি কোন কারনে পিত্তনালীতে বাধা সৃষ্টি হয় তাহলে পিত্তরস পিত্তথলিতে জমে বৃদ্ধি পায় এবং শারীরের প্রবাহমান রক্তের সাথে মিশ্রিত হয় ফলে রক্তে সিরাম বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় হাত, পা, মুখমণ্ডল, নক, জিহবা, চোখ, ত্বক এমনকি প্রস্রাব পর্যন্ত হলুদ বর্ণ ধারণ করে, একেই জন্ডিস (Jaundice) বলে।

জন্ডিসের কারনঃ

লিভারের রোগ জন্ডিসের প্রধান কারণ। আমরা যা কিছুই খাই না কেন তা লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়। লিভার নানা কারণে রোগাক্রান্ত হতে পারে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাসগুলো লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হয় যাকে বলা হয় ভাইরাল হেপাটাইটিস। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই জন্ডিসের প্রধান কারণ এই হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলো। তবে উন্নত দেশগুলোতে অতিরিক্ত মধ্যপান জন্ডিসের একটি অন্যতম কারণ।

জন্ডিস সাধারণত ৩ প্রকারঃ
১। Haemolytic জন্ডিস- কারণঃ অতিরিক্ত লোহিত রক্ত কনিকা ধ্বংস।
২। Hepatocellular জন্ডিস- কারণঃ যকৃতের অস্বাভাবিক কোষ ধ্বংস হওয়ায় জন্য।
৩। Obstructive জন্ডিস- কারণঃ পিত্তনালীর পাথর অথবা কোন টিউমারের জন্য।

বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে জন্ডিস দেখা দেয়।
১। হেপাটাইটিস এ, ই-কারণঃ দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়।
২। হেপাটাইটিস বি- কারণঃ হেপাটাইটিস ভাইরালের সংক্রমণে, রক্তের সংস্পর্শে হয়ে থাকে।
৩। হেপাটাইটিস সি, ডি- কারণঃ রোগাক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে মেলামেশা, রক্ত ট্রান্সফারেন্সের মাধ্যমে।
এ ছাড়া অটোইমিউন লিভার ডিজিজ এবং বংশগত কারণসহ আরও কিছু অপেক্ষাকৃত বিরল ধরনের লিভার রোগেও জন্ডিস হতে পারে। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়ও অনেক সময় জন্ডিস হয়। তা ছাড়া থ্যালাসিমিয়া ও হিমোগ্লোবিন ই-ডিজিজের মত যে সমস্ত রোগে রক্ত ভেঙ্গে যায় কিংবা পিত্তনালীর পাথর বা টিউমার এবং লিভার বা অন্য কোথাও ক্যান্সার হলেও জন্ডিস হতে পারে। তাই জন্ডিস মানেই লিভারের রোগ এমনটি ভাবা ঠিক নয়।



জন্ডিসের লক্ষনঃ

জন্ডিসের লক্ষণ হল চোখ ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া। সমস্যা বেশি হলে পুরো শরীর গাঢ় হলুদবর্ণ ধারণ করতে পারে। অনেকসময় পায়খান সাদা হয়ে যাওয়া, চুলকানি, যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও দেখা যায়। তবে হেপাটাইটিস রোগে জন্ডিসের পাশাপাশি ক্ষুদামন্দা, অরুচি, বমি ভাব, জ্বর জ্বর অনুভূতি কিংবা কাঁপানি দিয়ে জ্বর আসা, মৃদু বা তীব্র পেট ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। এ সব উপসর্গ দেখা দিলে তাই অবশ্যই একজন লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। 

জন্ডিসের পরামর্শ ও চিকিৎসাঃ

১। পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। সাত থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস সেরে যায়। পরিপূর্ণ বিশ্রাম মানে এই সময়ে ভারী কোনো কাজ বা পরিশ্রমের কোনো কাজ না করা। কারণ, ভাইরাল হেপাটাইটিস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে পূর্ণ বিশ্রাম না নিলে বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের ফলে জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
২। তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করুন।
৩। প্রচুর শর্করা জাতীয় ও ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খেতে হবে।
৪। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
৫। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, জীবাণুমুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণের মাধ্যমে জন্ডিসের আক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব।
৬।  হেপাটাইটিস-এ ও ই খাদ্য ও পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। আর বি, সি এবং ডি দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি খেতে হবে। শরীরে রক্ত নেয়ার দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরী।
৭। ব্যবহারকৃত ইনজেকশন কিংবা নাক-কান ফোঁড়ানোর সুই ব্যবহার করবেন না। যারা সেলুনে সেভ করেন, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আগে ব্যবহার করা ব্লেড বা ক্ষুর আবারো ব্যবহার করা না হয়।
৮। মদ্য পান থেকে বিরত থাকুন।
৯। নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
১০। হেপাটাইটিস এ এবং বি হওয়ার আশংকামুক্ত থাকতে হেপাটাইটিস এ এবং বি এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন।

ল্যাব পরীক্ষাঃ Serum Billirubin, HBsAg., SGPT.


***হোমিওপ্যাথিতে জন্ডিসসহ সকল লিভার রোগের অনেক উন্নত এবং সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা করা হয় ইনশাআল্লাহ্‌। HBsAG (+) হলে, কার্যকারী চিকিৎসা পেতে যোগাযোগ করুন আমাদের ফেইসবুক পেইজে 


* লিভারের সমস্যার কারনে জন্ডিস দেখা দিলে আমরা Chelidonium M. Q  ওষুধ টি ব্যবহার করিব।


* জন্ডিসের কারনে চোখ হলুদ হয়ে গেলে Hydrastis Can. Q  (হাইড্রাসটিস ক্যান. মাদার) ঔষধটি প্রয়োগ করিব।


* জন্ডিস সহ হাত পা জ্বালাপোড়া ভাব থাকলে Natrum Sulphuricum 200 (নেট্রাম সালফ 200) শক্তির ঔষধটি  সেবন করিব।

* জন্ডিস দেখা দেওয়ার পর পায়খানার বর্ণ কালো বা ছাই রঙের হলে Carduus Marianus Q (কারডুয়াস মেরিনাস মাদার) ব্যবহার করিব।




 বিঃ দ্রঃ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা শ্রেয়
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শে যোগাযোগ করুন আমাদের ফেইসবুক পেইজে ...

1 comment:

  1. জন্ডিস কি এ নিয়ে অনেক লেখা পড়েছি কিন্তু আপনার লেখাটি সেরা ছিল।
    আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

    ReplyDelete

Theme images by belknap. Powered by Blogger.